আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের ৪২ বছর বয়সি এমা হিকি তাঁর সঙ্গী স্টিফেন ব্রোঘাম এবং দুই সন্তানকে নিয়ে টেনেরিফের কোস্টা আদেজে ১২ দিনের ছুটির জন্য গিয়েছিলেন। ছুটির দশম দিনে মশার কামড় খেয়ে হঠাৎই তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী স্টিফেনের মতে, কামড়গুলো গোল গোল চাকার মতো সাঙ্ঘাতিক ভাবে ফুলে উঠেছিল। মশার কামড় খাওয়ার পর এমা অস্বাভাবিক ভাবে ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করেন। তাঁর শরীরের সমস্ত শক্তি যেন ফুরিয়ে আসে। এটি ছিল অসুস্থতার প্রথম লক্ষণ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এমা স্থানীয় একটি হাসপাতালে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরেও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে, যখন তাঁরা একটি ফার্মেসিতে পৌঁছন, এমা হঠাৎ করেই হোটেলের সিঁড়িতে মাথা ঘুরে পড়ে যান। পড়ে যাওয়ার ফলে এমার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। এরপর খিঁচুনি শুরু হয়। তিনি মুহূর্তেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান করার পর দেখা যায় যে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পাশাপাশি, পড়ে যাওয়ার কারণে এমার ঘাড়ও ভেঙে গিয়েছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবণতির দিকে যেতে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর ছিল যে চিকিৎসকরা এমাকে কৃত্রিম কোমায় রাখার সিদ্ধান্ত নেন। মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণের জন্য তাঁকে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও চিকিৎসকরা এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানাননি। তবে ঘটনার সময়কাল ও লক্ষণগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, মশার কামড়ের ফলে সৃষ্ট কোনও সংক্রমণ এমার স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। এই সংক্রমণ এমা হিকির শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অত্যন্ত দুর্বল করে দিয়েছিল। এর ফলে তিনি পড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। এমা হিকি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা টেনেরিফে আটকা পড়েছেন। এই কঠিন সময়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ঘটনা তা সে যতই তুচ্ছ হোক না কেন, তাকে হেলাফেলা করা একদমই উচিত নয়। কারণ এর থেকে অপ্রত্যাশিত মারাত্মক বিপদও আসতে পারে কখনও না কখনও। মশার কামড়ে কোমায় চলে যাওয়া এমা হিকি যেন এ শিক্ষাই দিয়ে গেলেন আমাদের।